আমি নারী আমি মুক্তিযুদ্ধা
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ ছিল প্রকৃত পক্ষে একটি জনযুদ্ধ। যে আদর্শ ও চেতনা নিয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বীরত্বের সাথে ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা- সে আদর্শ বাস্তবায়িত হয় নি। স্বাধীনতার রক্তস্নাত সে ইতিহাস ভুলুণ্ঠিত এবং বিকৃত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহের দ্বারা। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তিসমূহের কালো ছোবল থেকে ইতিহাসকে বাঁচাতে হবে, বাঁচাতে হবে বাঙালি চেতনাকে। এ গ্রন্থে শুধু মুক্তিযোদ্ধা নারীদের তুলে ধরার চেষ্টা...
আমি নারী আমি মুক্তিযুদ্ধা
প্রথম প্রকাশিত
মার্চ ২০০৪
পৃষ্ঠার দৈর্ঘ্য
১৪৪
ISBN
৯৭৮৯৮৪৫০২৯৫৪৪
বইয়ের তথ্য
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ ছিল প্রকৃত পক্ষে একটি জনযুদ্ধ। যে আদর্শ ও চেতনা নিয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বীরত্বের সাথে ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা- সে আদর্শ বাস্তবায়িত হয় নি। স্বাধীনতার রক্তস্নাত সে ইতিহাস ভুলুণ্ঠিত এবং বিকৃত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহের দ্বারা। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তিসমূহের কালো ছোবল থেকে ইতিহাসকে বাঁচাতে হবে, বাঁচাতে হবে বাঙালি চেতনাকে। এ গ্রন্থে শুধু মুক্তিযোদ্ধা নারীদের তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে, বিশেষ করে গ্রামের নারী মুক্তিযোদ্ধাদের। শত শত নারী মুক্তিযোদ্ধা গ্রামে-গঞ্জে, শহরে রয়েছেন, সকল মুক্তিযোদ্ধাকে একসঙ্গে খুঁজে বের করা সম্ভব হয় নি। ৫১জন নারী মুক্তিযোদ্ধার কথা স্থান পেয়েছে এই গ্রন্থে। প্রথমত প্রশিকার মাঠ-কর্মীদের মাধ্যমে সংগৃহীত প্রকৃত এলাকার মুক্তিযোদ্ধা, সাব সেক্টর কমান্ডার এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের নামের প্রাথমিক তালিকা সংগ্রহ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলেন তথ্য সংগ্রহকারীরা। তারা কোথায়, কখন, কার দ্বারা কীভাবে যুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়েছেন, তা জানার চেষ্টা করেন। তাঁদের সহযোদ্ধাদের নাম, কমান্ডারের নাম, কোথায়, কখন, কীভাবে কার নিকট প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং যুদ্ধের সময়ে তাঁদের কাজের ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন। উল্লিখিত কমান্ডার, সহযোদ্ধা এবং নারী মুক্তিযোদ্ধার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধে তাদের কাজের সঠিকতা সম্পর্কে জানার চেষ্ঠা করেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজার ক্ষেত্রে চেষ্টার ঘাটতি ছিল না। নারী মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে গিয়ে সবসময় সতর্ক প্রয়াস ছিল যেন কোনো তথ্যবিভ্রান্তি না ঘটে। তথ্য সংগ্রহের সময় একটি বিষয় লক্ষ করা গেছে- অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম তালিকাভুক্ত করতে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেন নি। অনেকেই বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করেছি দেশের জন্য, কাউকে তোষামদ করে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নয় । নাম তালিকায় গেল কি গেল না তাতে কিছু যায় আসে না।’ অনেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা আজ নিগৃহীত, বঞ্চিত, আর অমুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতা বিরোধীরা আজ প্রতিষ্ঠিত, আজ মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর সুপরিকল্পিতভাবে দমন নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।’ কয়েকজন বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন এবং যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না।’ কেউ কেউ বলেছেন 'মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংগ্রহ করে এবং তা নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরা উচিত।’ নারী মুক্তিযোদ্ধাদের কথায় তাঁদের আকুতি, দীর্ঘশ্বাস, আক্ষেপ, অভিযোগ-অনুযোগ, দৃঢ়তা এবং অসীম মনোবলের পরিচয় পাওয়া যায়। জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অসামান্য গৌরবগাথা সম্পর্কে। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে হলে প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরা এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার আলোকে নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত ও সচেতন করে গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্যেই এই প্রয়াস।